যার কেবল অবস্থান আছে কিন্তু দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা বা বেধ বলতে কিছুই নেই তাকে বিন্দু বলে। দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা কোনো কিছুই নেই বলে বিন্দুর কোনো মাত্রা নেই অর্থাৎ, বিন্দুর মাত্রা শুণ্য।
স্থানাঙ্ক জ্যামিতিতে, বিন্দু হলো স্থানিক অনন্য অবস্থান। আরও সুষ্পষ্ট করে বলা যায়, বিন্দু হলো ইউক্লিডীয় জ্যামিতির সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম একক যার উপর জ্যামিতি প্রতিষ্ঠিত। এ কারণে পূর্ব সংজ্ঞায়িত কোনো উপাদান দ্বারা বিন্দুকে সংজ্ঞায়িত করা যায় না। বিন্দু যেসব বৈশিষ্ট্য মেনে চলে, কেবল সেইসব বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতেই বিন্দুকে সংজ্ঞায়িত করা যায় যা ইউক্লিডীয় স্বতঃসিদ্ধ নামে অভিহিত। জ্যামিতিতে বিন্দুর কোনো দৈর্ঘ্য, ক্ষেত্রফল বা আয়তন নেই। অর্থাৎ, মাত্রা সংক্রান্ত কোনো বৈশিষ্ট্যই বিন্দু বহন করে না।
অন্যভাবে বলা যায়..
একটি রেখার দৈর্ঘ্য ধীরে ধীরে হ্রাস করলে অবশেষে একটি বিন্দুতে পরিণত হয়। একটি সরলরেখার উপর অসংখ্য বিন্দু থাকে। প্রাথমিক জ্যামিতি যেসব ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত বিন্দু তাদের মধ্যে অন্যতম।
দুইটি রেখাংশের ছেদস্থানে বিন্দু উৎপন্ন হয়েছে।
আবার এভাবে বলা যায়, দুইটি সরলরেখা পরস্পর মিলিত হলে মিলিত স্থানে একটি বিন্দু উৎপন্ন হয়। অর্থাৎ, পরস্পরচ্ছেদী দুইটি রেখার ছেদস্থান একটি বিন্দু দ্বারা নির্দিষ্ট হয়। যেমন, কার্তেসীয় সমতল -এ x-অক্ষ এবং y-অক্ষ পরস্পর যে স্থানে মিলিত হয়, সেই মিলিত স্থানই একটি বিন্দু বলে পরিচিত; বিন্দুটিকে সাধারণত O দ্বারা প্রকাশ করা হয় এবং O(0, 0) লিখে বুঝানো হয়। আবার ত্রিমাত্রিক জগতে, একটি মিষ্টির প্যাকেটের ধার তিনটি প্যাকেটের এক কোণায় একটি বিন্দুতে মিলিত হয়। আরেকটি উদাহরণ দেওয়া যাক - একটি বইয়ের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা বা বেধ অর্থাৎ ধারগুলো বইটির একটি কোণায় একটি বিন্দুতে মিলিত হয়।
জ্যামিতির যেসব মৌলিক উপাদানগুলো ইউক্লিডীয় জ্যামিতির ভিত্তি, বিন্দু তাদের মধ্যে অন্যতম। ইউক্লিড নিজেই বিন্দুকে একভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। তাঁর মতে, ”যার কোনো অংশ নেই, তাই বিন্দু”। দ্বিমাত্রিক ইউক্লিডীয় সমতলে, একটি বিন্দুকে সংখ্যার একটি ক্রমজোড় (x, y) হিসাবে উপস্থাপন করা হয় এবং (x, y) লিখে বুঝানো হয়, যেখানে ক্রমজোড়ের প্রথম সংখ্যা দ্বারা সচরাচর অনুভূমিক বরাবর দুরত্ব প্রকাশ করা হয় এবং x লিখে বুঝানো হয়; এবং ক্রমজোড়ের দ্বিতীয় সংখ্যা দ্বারা সচরাচর উলম্ব বরাবর দুরত্ব প্রকাশ করা হয় এবং y লিখে বুঝানো হয়। দ্বিমাত্রিক ইউক্লিডীয় সমতলের এই ধারণাটিকে খুব সহজেই ত্রিমাত্রিক ইউক্লিডীয় জগত -এ সাধারণীকরণ করা যায়। ত্রিমাত্রিক ইউক্লিডীয় জগতে, একটি বিন্দুকে সংখ্যার একটি ক্রমত্রয়ী (x, y, z) হিসাবে উপস্থাপন করা হয় এবং (x, y, z) লিখে বুঝানো হয়, যেখানে ক্রমত্রয়ীর প্রথম সংখ্যা দ্বারা সচরাচর দৈর্ঘ্য বরাবর দুরত্ব প্রকাশ করা হয় এবং x লিখে বুঝানো হয়; ক্রমত্রয়ীর দ্বিতীয় সংখ্যা দ্বারা সচরাচর প্রস্থ বরাবর দুরত্ব প্রকাশ করা হয় এবং y লিখে বুঝানো হয়; এবং ক্রমত্রয়ীর তৃতীয় সংখ্যা দ্বারা সচরাচর বেধ বা উচ্চতা বরাবর দুরত্ব প্রকাশ করা হয় এবং z লিখে বুঝানো হয়। দ্বিমাত্রিক ইউক্লিডীয় সমতলের ধারণা এবং ত্রিমাত্রিক ইউক্লিডীয় জগতের এই ধারণাগুলোকে চুড়ান্তভাবে অতি সহজেই সসীম সংখ্যক মাত্রার জগত (finite dimensional space)-এ সাধারণীকরণ করা যায়। সসীম সংখ্যক মাত্রার জগতে একটি বিন্দুকে (x1, x2, x3, ... , xn) হিসাবে উপস্থাপন করা হয় এবং (x1, x2, x3, ... , xn) লিখে বুঝানো হয়। আর n হলো সসীম মাত্রা জগতের (finite dimensional space) মাত্রা যে জগতে বিন্দুটি অবস্থিত।
ইউক্লিডীয় জ্যামিতির অনেক গাঠনিক উপাদানই রয়েছে যেগুলো অসংখ্য বিন্দুর সমন্বয়ে গঠিত এবং এগুলোকে বিন্দুসমূহের সেট রূপে প্রকাশ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটি রেখা হলো অসংখ্য বিন্দুর সেট; যে সেটকে গঠন পদ্ধতিতে লিখলে দাঁড়ায়,
{L = (x1, x2, x3, ... , xn) : c1x1 + c2x2 + c3x3 + ... , + cnxn = d}
যেখানে c1, c2, c3, ... , cn এবং d ধ্রুবক এবং n হলো জগতের মাত্রা (dimension)। এ ধরণের আরও কিছু জ্যামিতিক গঠন রয়েছে যেগুলো সমতল, রেখাংশ এবং এ সংক্রান্ত অন্যান্য ধারণাগুলোকে সংজ্ঞায়িত করে। বিন্দুকে সংজ্ঞায়িত করা এবং বিন্দু সংশ্লিষ্ট জ্যামিতিক গঠনগুলোর বর্ণনার পাশাপাশি, ইউক্লিড বিন্দু সংক্রান্ত আরও একটি ধারণা স্বীকার করেন যা ইউক্লিড স্বীকার্য বলে পরিচিত। তিনি স্বীকার করেন যে, একটি বিন্দু থেকে অন্য একটি বিন্দু পর্যন্ত একটি সরলরেখা আঁকা যায়। যাহোক ইউক্লিডের বিন্দু সংক্রান্ত এই স্বীকার্য কিছুটা অসম্পূর্ণ ও অনির্দিষ্ট। কারণ - দুইটি ভিন্ন বিন্দু দিয়ে যে কেবল একটি অনন্য সরলরেখা আঁকা যায় - তাঁর স্বীকার্যে এ বিষয়টি উপেক্ষিত হয়েছে।
জ্যামিতিতে বিন্দুর কেবল অবস্থান আছে। অবস্থান ছাড়া এর আর কোন কিছুই নেই অর্থাৎ বিন্দুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং বেধ বা উচ্চতা বলতে কিছুই নেই। আবার এর কোনো পরিসীমা বা পরিধি, ক্ষেত্রফল বা আয়তন তাও নেই। অর্থাৎ বিন্দুর কোনো মাত্রা নেই। তাই বিন্দুর মাত্রা শুণ্য। সুতরাং, বিন্দু শুণ্য-মাত্রিক জ্যামিতির অন্তর্গত।
একটি সমতলে অবস্থিত দুইটি ভিন্ন বিন্দু স্কেল দ্বারা পরস্পর যোগ করলে একটি সরলরেখা পাওয়া যায়।
বিন্দু বিশ্লেষণ করলে কতকগুলো বিন্দু বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। নিচে কিছু বিন্দুর বৈশিষ্ট্য সমূহ উল্লেখ করা হলোঃ
৫০ ডিগ্রী
৬০ ডিগ্রী
৭০ ডিগ্রী
৮০ ডিগ্রী